বাইকে করে টেকনাফের পথে
বেস্ট বায়োস্কোপ, ঢাকা: ‘এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’ কবি হেলাল হাফিজের একটি বিশ্বখ্যাত কবিতার লাইন। যুদ্ধে যেতে প্রচুর সাহস প্রয়োজন। পুরান ঢাকার কিছু বাইকার ক্লাব যুদ্ধে না গেলেও গত ২৩ নভেম্বর যথেষ্ঠ সাহসের পরিচয় দিয়ে দিয়েছে। বাইকে করেই ঘুরে এসেছে সুদূর টেকনাফের মেরিন ড্রাইভের শেষ মাথা পর্যন্ত। এই দুরূহ কাজে অংশগ্রহণ করেছে পুরান ঢাকার অন্যতম চারটি বাইকার ক্লাব। ক্লাবগুলো হচ্ছে ষ্টার বাইকার্স,ফায়ার ব্লেডক্লাব, ওল্ডটাউন বাইকার্স এবং এডভেঞ্চার্স বাংলাদেশ।
প্রতিটি বাইকার্স ক্লাবই পুরান ঢাকার হওয়াতে চারটি ক্লাব মিলে ‘ইউনাইটেড পুরান ঢাকা’ নামের ব্যানারে তারা মোট ৬০ জন ৪০টি বাইকে করে ২৩ তারিখ রাত ১২টায় ঢাকা থেকে টেকনাফের উদ্দেশ্যে রওনা করে।
বিশাল বাইক ট্যুর। স্বাভাবিকভাবেই উত্তেজনায় ঘুম নেই কারও। সপ্তাহজুড়ে চললো প্রস্তুতি। গুগল ম্যাপ ঘেটে ঠিক করা হলো কোন রুট নিয়ে যাওয়া হবে। এরপর আসলো সেই কাঙ্খিত দিন। শেষ মুহূর্তের চেক চললো সবকিছুর। তেল, বাইকের অন্যান্য যন্ত্রাংশ সব সচল কিনা দেখতে থাকলেন বাইকাররা। এরপর কিট ও হেলমেট পরে দেই দুরন্ত যাত্রা শুরু।
মাঝরাতের প্রবলশীত এবং গা ছমছমে পরিবেশকে পুরোপুরি উপেক্ষা করে তারা এগিয়ে চলে। মুন্সীগঞ্জ ও মেঘনা ব্রীজ পার হয়ে দাউদকান্দি ব্রীজ, আস্তে আস্কে বড় হাইওয়েতে উঠেছে। বাইকের গতি ৭০ এর উপরে থাকলেও খুবই সাবধান বাইকাররা। ৪ লেনের ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়েতে তখন মিছিলের মতো একঝাঁক বাইক। অনেকগুলো হেডলাইট তখন জ্বলজ্বল করছে। এসব রোমাঞ্চের মাঝেই চললো বিরতি। হাইওয়েতে বসে চা খাওয়া তখন খুবই জরুরি। শীতের রাতে তখন ঠান্ডায় জমে শেষ।
চা খেতে গিয়ে অন্য বিপত্তি, স্বাভাবিকভাবেই কোনও চায়ের দোকানেই এতগুলো কাপ নেই। আর এত মানুষ একসঙ্গে বাইক কিট পড়ে থাকাতে সবাই বেশ মজা করেই দেখছিলেন। নিশ্চিতভাবেই তাদের দেখে তারুণ্যে ফিরে গেছেন অনেক মানুষ।
বিরতির পর আবার যাত্রা শুরু। ফেনী পার হওয়ার পর রাস্তা হয়ে গেলো পিচ কালো মসৃণ আর দু’পাশের গাছপালা হয়ে গেলো গাঢ় সবুজ। রাস্তার পাশে সারি সারি কলাগাছ। একটু পড়েই চোখে পড়লো সীতাকুণ্ড পাহাড়। দুরপাহাড়ের নীলাভ সবুজ রঙ।
চট্টগ্রামের প্রতিটি থানা বিশাল। বাজার দেখলেই সবাই সাইনবোর্ডে নাম চেক করা। একটা সময় তো মনে হয় রাস্তা বুঝি আর শেষ হবে না।
এরপর চট্টগ্রাম পোর্ট দিয়ে শহরে। ঢাকার মতোই আধুনিক। সেখানে নেমে ক্ষুধা জানান দিলো। কিছু খাওয়ার জন্য আবার বাইক থামলো প্রায় অর্ধশত। কিছুক্ষণ বিশ্রাম ও সেলফি তোলা শেষে আবারও কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে যাত্রা।
শরীরের ক্লান্তি ছাপিয়ে মনের জোরে একটা সময় কলাতলী পয়েন্ট। কষ্ট যেন সার্থক। এরপর বাইক নিয়ে দেশের সবচেয়ে সুন্দর রাস্তা ধরে এগিয়ে চলা। পাহাড় আর সাগর সাথে সাথে চলছে। পথে নদী, নৌকা, ঘাট, মোহনা সবাকিছুই আছে।
ইনানী পয়েন্ট পার হওয়ার পর রাস্তা সাগরের অনেক কাছে চলে এলো আর প্ল্যান অনুযায়ী অনেক বাইক তখন সৈকতে নেমে গেছে। ঢাকা থেকে যে দৃশ্য কল্পনা করা সেটাই বাস্তবে রুপ পেল।
বাইক নিয়ে সাগরের পানিতে একদল তরুণ। সাগরের উত্তাল শক্তি যেন তারুণ্যের শক্তির কাছে হার মানতে চাইছে। একদিকে সাগরের গর্জন। অন্যদিকে প্রায় অর্ধশত বাইকের গিয়ার তুলে গর্জন জানাচ্ছে।
এরপরের যাত্রা টেকনাফ। তখন যেন সামান্য পথেই বিরক্ত ধরে যাচ্ছিলো। সেখানেও পৌঁছে গেল বাইকগুলো। সেখানে ভাত আর মুরগির ঝোল দিয়ে উদরপূর্তি। টেকনাফ যাত্রা শেষ। শুরু হলো ঢাকা ফিরে আসার প্রস্তুতি। কক্সবাজারে মোট দুই রাত থেকে ২৬ তারিখ সকালে রওনা করে রাতেই ঢাকা এসে পৌছায় তারা।
বেস্ট বায়োস্কোপ তারুণ্য
২৯ নভেম্বর ২০১৭
- নতুন পরিকল্পনা নিয়ে আসছে বাংলা টকিজ - December 18, 2017
- বাইকে করে টেকনাফের পথে - November 29, 2017
- নতুন রুপে অবন্তি সিঁথি - November 29, 2016